আট কুঠুরি নয় দরজা সমরেশ মজুমদার বই রিভিউ আট কুঠুরি নয় দরজা - সমরেশ মজুমদার আট কুঠুরি নয় দরজা - সমরেশ মজুমদার বই রিভিউ
বইঃ আট কুঠুরি নয় দরজা
লেখকঃ সমরেশ মজুমদার
প্রথম প্রকাশঃ ১৯৯৩
প্রকাশকঃ আনন্দ পাবলিশার্স
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৩২
ধরণঃ পলিটিক্যাল থ্রিলার
এপার
ওপার দুই বাংলার সুপ্রতিষ্ঠিত
কথা সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের অনবদ্য উপন্যাস গুলোর একটি 'আট কুঠুরি নয়
দরজা' ৷ প্রথমেই উপন্যাসের
নাম বলি ৷ আট
কুঠুরি নয় দরজা এর
আক্ষরিক অর্থ হল আটটি
ঘর নয়টি দরজা ৷
কিন্তু লেখক তা না
ব্যবহার করে এর রূপক
অর্থ ও ব্যাখ্যা তুলে
ধরেছেন তার লেখায় ৷
" আট কুঠুরি নয়
দরজা কোনখানে তালা নেই আর
সেই ঘরটি তিনতলা ৷
আট কুঠুরি হল শরীরের আটটা
গ্রন্থি ৷ পিটুইটারি, থাইমাস,
থাইরয়েড, প্যারা থাইরয়েড, অ্যালড্রিনাল, প্যারোটিড, প্যাংক্রিয়াস এবং টেসটিস বা
ওভারিস ৷ এই শরীরটা
বেঁচে আছে এই আটটি
গ্রন্থির মধ্য দিয়ে হর্মোন
সিক্রিয়েশনের জন্য ৷ আর
এই আটটি গ্রন্থির সঙ্গে
শরীরের নয়টি দ্বার যুক্ত
৷ তিনতলা হল, মস্তিষ্ক, কোমর
থেকে উর্ধ্বভাগ এবং নিম্নভাগ ৷
নাক কান চোখ মুখ
ইত্যাদি নটা দ্বার এই
তলায় ছড়িয়ে আবদ্ধ, যা স্নায়ুশক্তির দ্বারা
নিয়ন্ত্রণ করা যায় ৷"
নামের
ব্যাপারটা আপাতত এতটুকুই থাক ৷ এবার
উপন্যাসের দিকে যাওয়া যাক
৷ উপন্যাসটির শুরুতেই রয়েছে অল্পবয়সী ডাক্তার স্বজন ও তার স্ত্রী
পৃথার দাম্পত্য প্রেমের রোমান্টিক বর্ণনা ৷ ভারতের কোলঘেঁষে
হিমাচল অঞ্চলের মান্ডি শহরের পাহাড়ি পরিবেশে ঘুরে বেড়ানোই তাদের
উদ্দেশ্য ৷ যদিও স্বজনের
উদ্দেশ্য ভিন্ন ৷ গন্তব্য স্থলে
পৌঁছার আগেই একের পর
এক বিপদের সম্মুখীন হল তারা ৷
প্রথমেই গাড়ি দূর্ঘটনা, তেলের ট্যাংক ফুটো হয়ে যাওয়া
এক 'প্রাইভেট প্রপার্টি'তে আশ্রয় গ্রহণের
চেষ্টা, তারপর এক বন্য চিতার
আক্রমণ, সেই 'প্রাইভেট প্রপার্টি'তে আশ্রয় কালে
এক মৃতদেহ উদ্ধার ও সামান্য ভৌতিক
অভিজ্ঞতা ৷ সবমিলিয়ে এ
যেন এক বিভীষিকাময় রাত্রির
শুরু ৷ অন্যদিকে শহরের
পুলিশ ও প্রশাসন হন্যে
হয়ে খুঁজে চলেছে আর এক চিতাকে,
নাম তার আকাশলাল ৷
কেন তাকে সবাই মিলে
খুঁজছে ? অথচ দেশবাসী তাকে
প্রাণভরে ভালবাসে, শ্রদ্ধা করে ৷ কেন
?
আকাশলালকে ঘিরেই মূল গল্প আবর্তিত
৷ মান্ডি শহরে শিবরাত্রির পূজায়
আশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন তাদের
দেবীদের নিয়ে এসে জমায়েত
হয় ৷ শহর তখন
লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় ৷
এসিপি সোমকে বরখাস্ত করা হয় পুলিশ
ডিপার্টমেন্ট থেকে ৷ সিপি
ভার্গিস অনবরত চাপের মুখে সময় পার
করতে থাকে ৷ মিনিস্টার
একের পর এক ফোন
দিয়ে যাচ্ছে কাজ হাসিল করার
জন্য ৷ ম্যাডাম নামক
এক রহস্যময়ী চরিত্রের দেখা মেলে সময়ে
সময়ে ৷ তার কর্মকাণ্ড
ধোঁয়াশাপূর্ণ ৷ ঘটনাচক্রে এসিপি
সোমের সাথে দেখা হয়ে
যায় স্বজন ও পৃথাকে ৷
তারা তিনজনই সমন্বিত প্রচেষ্টায় তৎকালীন বিপদ হতে উদ্ধার
পায় ৷ কিন্তু তারপর
?
এদিকে সিপি ভার্গিস আকাশলালকে জীবিত
অথবা মৃত ধরার জন্য
সারাদেশে ঘোষণা করেছে দশ লক্ষ টাকা
৷ অর্থাৎ আকাশলালের মাথার মূল্য দশ লক্ষ টাকা
৷ তবুও কেউ তার
সন্ধান দিতে পারে না
৷ কিন্তু এই আকাশলালই পূর্বজানান
দিয়ে শিবরাত্রির পূজার দিন মেলার মাঠে
হাজার হাজার লোকের সম্মুখে আত্মসমর্পণ করে ভার্গিসের কাছে
৷ কিন্তু কেন ? আকাশলালকে গ্রেপ্তারের পর বোর্ড ও
পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সবাই খুশি হলেও
কয়েক ঘন্টা পরে সবাই হতবাক
হয়ে যায় আকাশলালের মৃত্যুতে
৷ তাকে সমাহিত করা
হয় তার পারিবারিক কবরস্থানে
৷ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে
চুরি হয় তার মৃতদেহ
৷ ব্যাপারটা কিঞ্চিৎ উপলব্ধিতে আসে ভারতীয় সাংবাদিক
অনিকার ৷ পুলিশ পুরো
ব্যাপারটা যেন ছুঁয়েও ছুঁতে
পারছে না ৷ চুরিকৃত
মৃতদেহের উপর অভিনব এক
সার্জারি করেন একজন বৃদ্ধ
ডাক্তার ৷ একে একে
হারিয়ে যেতে থাকে আকাশলালের
কাছের মানুষ ডেভিড, ত্রিভুবন ও হায়দার ৷
গল্পের শুরু থেকে শেষ
পর্যন্ত ঘটে যায় বেশকিছু
রহস্যময়ী হত্যাকান্ড ৷ উপন্যাসটির শেষদিকে
পাওয়া যায় অন্যরকম এক
চরিত্র, গগনলাল ৷ শেষ ধাপে
পাওয়া যায় দূর্দান্ত টুইস্ট
৷ 'আটকুঠুরি নয় দরজা' নামের
সাথে উপন্যাসটির সার্থকতা উপলব্ধি করতে হলে এগিয়ে
যেতে হবে শেষ শব্দ
অব্দি ৷
বিঃদ্রঃ উপন্যাসের কোথাও লেখা নেই হিমাচলের
মান্ডি শহরে ঘটনা সমূহ
সংঘটিত ৷ কিন্তু রিভিউতে
তা লিখেছি ৷ এর কারণ
'আট কুঠুরি নয় দরজা' বইটি
পড়ার কিছুদিন আগেই আমি সুনীল
গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু সিরিজের একটি বই 'কাকাবাবু
ও ছদ্মবেশী' পড়েছিলাম ৷ ঐ গল্পে
বর্ণিত শহরের সাথে 'আট কুঠুরি নয়
দরজা' উপন্যাসের শহরের বর্ণনার যথেষ্ঠ মিল খুঁজে পাই
৷ এরপর গুগলে সার্চ
করে জানতে পারি মান্ডি শহরটি
বর্তমান ভারতের হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত ৷
" ১৯৫০ সালে হিমাচল একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল ঘোষিত হয় ৷ এরপর ১৯৭১ সালের হিমাচল প্রদেশ রাজ্য আইন অনুযায়ী ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অষ্টাদশ রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে হিমাচল প্রদেশ ৷ " – উইকিপিডিয়া
'আট
কুঠুরি নয় দরজা' উপন্যাসটি
১৯৫০ থেকে ১৯৭১ এর
মধ্যবর্তী কোনো সময়কেই ধারণ
করে ৷
COMMENTS