আলোকিত হোক জীবন নিজস্ব ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যে!

স্বকীয়তা! এ যেন সভ্যতার সাথে বিলুপ্তপ্রায় এক শব্দ।কখনো ভেবে দেখেছেন কি দৈনন্দিন জীবনের যাঁতাকলে পিষে হারিয়ে ফেলছেন নিজ ব্যক্তিসত্তা? সেই ছ...

স্বকীয়তা!
এ যেন সভ্যতার সাথে বিলুপ্তপ্রায় এক শব্দ।কখনো ভেবে দেখেছেন কি দৈনন্দিন জীবনের যাঁতাকলে পিষে হারিয়ে ফেলছেন নিজ ব্যক্তিসত্তা?
সেই ছোট্ট বেলা থেকে শুনে আসছি আমরা বাঙালিরা নাকি অনুকরণ প্রিয় জাতি....বিষয়টা নিয়ে খুব একটা ভেবে গভীরেও হয়তো যেতে হবে না আপনার...আশেপাশে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই সে আপনাকে ধরিয়ে দেবে অনুকরণ এর সুবিশাল তালিকা।
সেখানে থাকবে সামাজিক থেকে বাহ্যিক নানান দিকের অনুকরণপ্রিয়তার চমৎকার সব উদারহণ...থাকবে বিজ্ঞাপন থেকে শিক্ষামূলক সকল ক্ষেত্রের অনুকরণের অসাধারণ বিবরণ...হতে পারে আপনার খাদ্যাভ্যাস আর পোশাক-আশাকে অনুকরণ দোষে দূষিত হবার জন্য আক্রমণ...এরপর একদিন হয়তো আপনারও হয়ে যেতে পারে অনুকরণের সংক্রমণ!
তবে সে পর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই খুঁজে ফেলা উচিত নিজ স্বকীয়তা।অন্যের সাজসজ্জা!কেন তা কারণ হবে আপনার লজ্জার?অন্যের আদলে নিজেকে গড়ার অভিপ্রায়...তাতে কোনো প্রাপ্তি নেই বরং তাতে আপনার নিজস্ব স্বকীয়তাই চলে যায়!
একটু খেয়াল করলে দেখবেন...পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়া প্রতিটি শিশুর জন্য তাদের মা-বাবা এমন নাম খোঁজেন যে নামে তাদের পরিবারে ইতিপূর্বে কেউ ছিলো না...জন্মের সৃষ্টিলগ্ন থেকেই যখন আপনাকে পৃথক ভাবে ফুটিয়ে তোলার এতো প্রচেষ্টা তবে কি লাভ অন্যের বৈশিষ্ট্যে নিজেকে মহিমান্বিত করে?
সৃষ্টিকর্তা নিজে যখন প্রতিটি মানুষকে দিয়েছেন নিজস্ব অবয়ব তখন অন্যের ছাঁচে নিজেকে ঢেলে সাজানো কি তার প্রদত্ত এ উপহারের অবহেলা করা নয়?যা কিছু আপনার আছে তা নিতান্তই আপনার...আর তাই ষাটোর্ধ কারোর নিজের সামাজিক ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে অনিচ্ছাসত্ত্বেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা বড্ড বেমানান....একই কারণে ষোল বছরের কিশোরীর পেন্সিল  হিলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাঁটার অভ্যাস করাটাও নিতান্ত হাস্যকর...আর সে জন্যেই হয়তো তিন বছরের কর্মজীবনে দক্ষতার ক্রমাগত স্বাক্ষর রেখে এসেও একলা বসে নিজেকে "আরও স্মার্ট হতে পারলে!" বলা ছেলেটাই খুব আনস্মার্ট হয়ে যায়।
ঝেড়ে ফেলুন অন্যের মতো হবার নিজের নিত্যনৈমিত্তিক এই ইচ্ছেকে।বিশ্বাস করুন নিজ স্বকীয়তায়।কি হবে যদি ষাটোর্ধ লোকটি সামাজিক ভাবমূর্তিকে তুচ্ছ করে সন্তুষ্ট থাকেন নিজ ব্যক্তিজীবনের স্বাভাবিক রুটিনে...কি ই বা হবে এমন যদি সেই ষোড়শী ফ্ল্যাট স্যান্ডেল পায়ে দিয়েই স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুড়ে বেড়ায় পেন্সিল হিল এর সেই অস্বস্তিকর অনুভূতি বিসর্জন দিয়ে।শেষোক্ত ছেলেটিও না হয় নিজের স্মার্টনেস খুঁজে পাক টানা তিন বছরের সফল কর্মজীবনে।
কেননা স্বকীয়তা আপনাকে নিজের হতে শেখাবে আর অনুকরণ কেবলই অন্যের আদলে গড়া পুতুল!যখন নিজেই আপনি নিজের হতে শিখবেন না তখন সমাজ বা দেশ কি করে আপনার দিকে নতুনত্বের আশায় হাত বাড়াবে?